গ্রীষ্মের সেরা ফল আমের উপকারিতা ও অপকারিতা ৷ 2024

আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কেন আম খাবেন তা জেনে নিন

 

আম একটি সুস্বাদু ফল। এই ফলের চাহিদা অনেক। আমের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি সকলের চাহিদার মধ্যে থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের আম রয়েছে যেমন- ল্যাংড়া, হাড়িভাংগা, আম্রপালি, ফজলি সহ আরো নানান ধরনের। আম দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। সুস্বাদু সব  ফলের মধ্যে আম অন্যতম।

তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এই পোস্ট থেকে আপনারা খুব সহজে জানতে পারবেন আমের উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিক। এছাড়াও আরো অনেকে জানতে চায়, আম খাওয়ার সঠিক সময় ও আম খেলে কি গ্যাস হয়। যা আজকের এই পোস্ট থেকে জানতে পারব । 

 

আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

 

আম পছন্দ করে না এরকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। আম একটি সুস্বাদু খাবার যা সকলের চাহিদার মধ্যে থাকে। তাই জেনে রাখা উচিত এর উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমের পুষ্টিগুণ বা উপকারিতা দিক গুলো।

আমের উপকারিতা ও অপকারিতা.jpg

 

ত্বকের যত্নে

 

ত্বকের যত্নের জন্য আমের উপকারিতা অনেক। ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে আম। ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আম। বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এটি।

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে

 

স্তন ক্যান্সার থেকে শুরু করে কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে আম কাজ করে। কারণ আমে রয়েছে কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন, অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, গ্যালিক অ্যাসিড ও মিথাইল গ্যালেট নামের কঠিন নামওয়ালা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো।

আম ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন সমৃদ্ধ। যা আপনার চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করবে। আমে থাকা পটাশিয়াম হার্ট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও আমে রয়েছে পানি এবং ডায়েটরি ফাইবার। যা হজমের জন্য খুবই ভালো। তাই অন্যান্য ফলের সঙ্গে আম খাওয়া যেতে পারে।

কোলেস্টেরলের পরিমান ঠিক রাখতে

 

রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিয়মিত আম খাওয়া যেতে পারে। আমে রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন যা রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে।

ঘুমে সাহায্য করে

 

যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তাদের জন্য আমের উপকারিতা অনেক‌। আমে থাকা ট্রিপটোফ্যান, মেলাটোনিন, ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের ঘুমকে ত্বরান্বিত করে। তাই বলা যায় অনিদ্র দূর করার জন্য নিয়মিত আম খাওয়া যেতে পারে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

 

যাদের হজমে দুর্বলতা রয়েছে তাদের জন্য আম একটি উপকারী ফল। নিয়মিত আম খেলে হজম শক্তির বৃদ্ধি হয়। কারণ আমে রয়েছে প্রিবায়োটিক যা আমাদের পাকস্থলীর বিভিন্ন গাট ব্যাক্টেরিয়ার জন্য উপকারী। ৩/৪ কাপ আমে থাকে ডায়েটারি ফাইবারের প্রায় ৭%। যা হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

অ্যালকালাইন লেভেল

 

আমে আছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। আছে সাইট্রিক অ্যাসিডও। শরীরের অ্যালকালি নামের রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক রাখে এটি। তাই নিয়মিত আম খাওয়া যেতে পারে।

চোখের সুরক্ষায়

 

আমরা জানি রাতকানা রোগ দূর করার জন্য ভিটামিন এ এর প্রয়োজন হয় যা আমে রয়েছে। আম খাওয়ার ফলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই চোখের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আম খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ড্রাই আই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা আম খেয়ে উপকার পেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ করে

 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সকলের জন্য জরুরী। আম এমন একটি ফল যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও আমে রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

ত্বক ও চুলের যত্নে

 

ত্বক ও চুলের যত্নে আমের ভূমিকা অনেক। আমে আছে ভিটামিন এ, সি ও ই এর অন্যতম উৎস যা ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মনযোগ ও স্মৃতির জন্য

 

মনোযোগ ধরে রাখাটা সকলের জন্য জরুরী, তা কাজে হোক বা অন্য ভালো কিছুর জন্য। মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য আম অনেক সহায়ক ফল। মেমোরি বুস্টার হিসেবেও কাজ করে ফলটি।

 

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা

 

কাঁচা আম খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করে থাকি। কিন্তু এর উপকারিতা দিকগুলো আমরা অনেকে জানিনা। কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।

পেটের সমস্যা কমায়

 

অনেকের বদ হজম হয়ে থাকে। এই বদ হজমের সমস্যা দূর করার জন্য কাঁচা আমের উপকারিতা রয়েছে। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের সমস্যা কমাতে বেশ উপকারী কাঁচা আম। এখনো গ্রামীন এলাকায় অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

মুখের নানান ধরনের সমস্যা দূর করতে

কাঁচা আমের রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরের জন্য খুবই কার্যকারী। কাঁচা আমের ভিটামিন সি থাকার কারণে মুখের নানা রকম ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। স্কার্ভি ও মাড়ি থেকে রক্তপাতের মতো সমস্যায় উপকারী কাঁচা আম। 

এছাড়াও কাঁচা আম চোখের সমস্যা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

আমের উপকারিতা ও অপকারিতা.jpg (2)

পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা

 

আমের উপকারিতা সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এখন জেনে পাকা আম খাওয়ার কিছু উপকারিতা দিকগুলো।

খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে

 

আমরা জানি পাকা আমি প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে। আমে আঁশ জাতীয় উপাদান হল পেকটিন। যা পাকস্থলিস্থ খাদ্য উপাদানকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে। এছাড়া আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে।

কমায় অ্যাসিডিটির সমস্যা

 

আমে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও অল্প পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডিক উপাদানগুলো অ্যালকালাইজিং এর মাধ্যমে অ্যাসিডিটির সমস্যাকে প্রশমিত করতে কাজ করে। তাই আমের এই গুনাগুন আমাদের শরীরের জন্য খুবই কার্যকারী। এছাড়াও ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী, বাড়াতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, চোখের জন্য উপকারী এ বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

 আম খাওয়ার সঠিক সময়

 

গ্রীষ্মকালের ফলের রাজা আম। গ্রীষ্মকালের নানান ধরনের ফল রয়েছে এর মাঝে আমি একটি। আম খেতে অনেক সুস্বাদু তাই আমের জনপ্রিয়তা অনেক। তবে আম খাওয়ার সঠিক সময়টা জেনে রাখা উচিত।

যেহেতু আম একটি পরিপূরক খাবারের কাজ করে তাই খুব দ্রুত পেট ভরে যায়। সে ক্ষেত্রে বলা যায় আম খাবার ক্ষেত্রে দুপুর ও রাতের বেলা খাওয়া সঠিক সময় নয়। আম খাওয়ার জন্য সঠিক সময় হচ্ছে সকাল ও বিকেল বেলা। তবে বাসি পেটে খাওয়া যাবেনা। ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই সকালের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। সকালের খাবার খেয়ে তারপর আম খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও আম ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন বাড়াতে চান না। তারা আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। ওজন বাড়াতে না চাইলে প্রতিনিয়ত আম না খাওয়াই ভালো। তবে নিয়ন্ত্রিত মত খাওয়া যেতে পারে।

আম খেলে কি গ্যাস হয়

 

অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে আম খেলে কি গ্যাসের সমস্যা হয় কিনা। যেসব ফলে ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকে সেই ফলের কারণে গ্যাস, বমি বমিভাব সমস্যা হয়ে থাকে। আম এমন একটি ফল এতে গ্লুকোজের তুলনায় ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকে। যদি আম খাওয়ার পর গ্যাস, বমি বমিভাব সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে আমের উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরার। আশা করা যায় এই আর্টিকেল সম্পন্ন পড়েছেন। এবং আমের উপকারটা দিক ও অপকারিতা দিকগুলো জানতে পেরেছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে আরো বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে। যেগুলো করলে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

Category:

Leave a Comment