কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা। এর অসাধারন পুষ্টিগুণ।2024

Table of Contents

কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা। এর অসাধারন পুষ্টিগুণ।2024

কমলালেবু খেতে আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি। কমলালেবু খুবই রসালো একটি ফল। কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা অশেষ। এই ফলটির রং সব ফলের থেকে আলাদা এবং এর স্বাদও অন্যান্য ফলের থেকে আলাদা। আমরা কম বেশি প্রায় সবাই জানি যে কমলালেবু খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আজকে আমরা সবাই জেনে নেব এই কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।

টক কমলা হজমকে দৃঢ় করে। আবার অন্যদিকে কাঁচা কমলা কফ, পিত্ত, বাত দূর করতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি, কফ প্রভৃতি রোগীদের জন্য কমলা খুবই উপকারী।

কমলা কি?

কমলার গাছ চির সবুজ গাছ। এই গাছটি প্রায় তিন থেকে চার মিটার উঁচু বা মাঝারি আকারের হয়। কমলা গাছের অনেক ডাল পালা থাকে এবং সেগুলো কাটাযুক্ত হয়। দেখতে অনেকটা ঝোপঝাড়ের মত লাগে। কমলা লেবু খেতে টক-মিষ্টি, প্রভাব উষ্ণ এবং স্পর্শ মসৃন হয়।

কমলার ফুল সুগন্ধি যুক্ত এবং নমনীয় হয়। এগুলো জ্বর কমাতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। কমলার ফুল যদি নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে প্রস্রাবের বাঁধা দূর হয়ে যাবে। এই কমলা খাওয়ার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

 

কমলার পুষ্টিগুন:

  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি
  • ক্যালোরি
  • প্রোটিন
  • জল
  • কার্বোহাইড্রেট
  • চিনি
  • ফাইবার
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • পটাশিয়াম
  • ফসফরাস ইত্যাদি।

এবার আমরা জেনে নেব কমলালেবুর  উপকারিতা সম্পর্কে।

কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

 

 কমলার উপকারিতা:

 

১. লোমকূপ সংক্রান্ত রোগে কমলালেবু উপকারীঃ

কমলার শাঁস,ফলের খোসা, পাতা ও ফুল ভেজে নিতে হবে। তারপর এটি পিষে নিতে হবে এবং শরীরের লোমকূপের প্রদাহ স্থানে লাগাতে হবে। এটি ব্যবহার এর ফলে সমস্যা নিরাময় হয়ে যাবে। এটি দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষত সারাতে কাজ করে ওষুধ হিসেবে।

 

২. সর্দি ও কাশিতে কমলার উপকারীঃ

১০-২০ মিলিগ্রাম কমলার রসে মধু এবং বরফ  লবণ ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর এটি খেলে সর্দি, যক্ষ্মা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের রোগ নিরাময় হয়ে যাবে।

 

 ৩. কমলা হার্টের জন্য উপকারীঃ      

  •  কমলার ফুলের রস বুকে মালিশ করার ফলে, হার্ট সংক্রান্ত অনেক রোগের অবসান হবে।
  • কমলার খোসা থেকে একটি ক্বাথ তৈরি করতে হবে। এটি ১০-২০ মিলিগ্রামে পান করলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যাবে।

 

৪.বাতের চিকিৎসায় কমলালেবু উপকারিতাঃ

কমলার পাতা, ফুল এবং বাকল দিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর এটি সামান্য গরম করতে হবে এবং ব্যথাযুক্ত স্থানে এবং ফোলা জয়েন্টগুলিতে এটি ভালো করে লাগাতে হবে। এটি ফোলা এবং ব্যথা উভয় ক্ষেত্রেই উপশম দিতে সাহায্য করে।

 

৫. কমলালেবু লিভারকে সুস্থ  রাখতে সাহায্য করেঃ

কমলা খোসার একটি ক্বাথ তৈরি করতে হবে। তারপর এটি ১০-২০ মিলিগ্রামে পান করতে হবে। তাহলে লিভার সুস্থ হয়ে যায় এবং লিভারের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে।

 

৬.চর্মরোগে কমলালেবুর উপকারিতাঃ

কমলার পাতা এবং বাকল পিষে নিতে হবে। তারপর মাথার তালুতে প্রলেপ দিতে হবে। তাহলে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই পেস্ট দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের ফুসকুড়ি ও একজিমার মতো অত্যন্ত চুলকানি রোগের জন্যও উপকারী একটি উপাদান। এর সাহায্যে শরীরের সাধারণ চুলকানি এবং অন্যান্য চর্মরোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে।

 

. কমলা ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করেঃ

কমলার খোসা শুকিয়ে পিষে নিতে হবে। তারপর ওই কমলার লেবু খোসার গুড়ো সাথে গোলাপ জল ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তাহলে এটি মুখের ব্রণ এবং ব্রণ নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 

৮. টাইফয়েড নিরাময়ে কমলা সাহায্য করেঃ

কমলালেবুর ১০-২০ মিলি রস খাওয়ার ফলে, শরীর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ব্যবহারে ফলে টাইফয়েড জ্বর ইত্যাদি রোগ সেরে যায়।

 

৯. কমলা শরীরের দুর্বলতা সারাতে সাহায্য করেঃ

কমলার ফুলের রস বের করে নিতে হবে। এর ১-২ ফোঁটা নাকে রেখে ফুলের রস দিয়ে মালিশ করতে হবে। তাহলে চুলকানি উপশম হবে। এতে শরীরের দুর্বলতাও দূর হয়ে যাবে।

 

১০. জ্বর ও কাশি নিরাময়ে কমলা সাহায্য করেঃ

কমলার রসের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পান করলে জ্বর-কাশিতে উপকার পাওয়া যাবে।

 

১১. কমলা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করেঃ

কমলার খোসার ১৫ থেকে ২০ মিলিগ্রামের একটি ক্বাথ তৈরি করতে হবে। এর সাথে লেবুর রস যোগ করতে হবে এবং সকালে খালি পেটে খেতে হবে। ক্ষুধামন্দা, পেট ফাঁপা, বমি, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে এই ক্বাথ সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে।

 

১২. ডায়াবেটিসে উপকারী কমলালেবুঃ

কমলালেবুর ফলের পাল্প, কমলার খোসা, পাতা এবং ফুল ভাজতে হবে। তারপর এটি পিষে খেলে ডায়াবেটিস ও প্রস্রাবের সমস্যা দূর হবে।

 

১৩. কমলালেবু রক্তের সমস্যায় উপকারী উপাদানঃ

৫ মিলিগ্রাম অ্যাবসিন্থের রসের সঙ্গে ২০ মিলিগ্রাম কমলার রস মেশাতে হবে। এটি সেবন করার ফলে বিভিন্ন ধরনের রক্তের রোগে উপকার পাওয়া যাবে। রক্ত সংক্রান্ত রোগে কমলা খাওয়ার অনেক উপকার আছে।

 

১৪. স্নায়বিক রোগে কমলালেবুর খাওয়ার উপকারিতাঃ

কমলাতে তাপ ও ​​গুরু গুণ থাকার ফলে এটি নার্ভের রোগ যেমন ব্যথা ইত্যাদিতেও উপকার পাওয়া যায়। পাশাপাশি মাংসপেশির পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।

 

১৫. ম্যালেরিয়ায় কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতাঃ

একটি গবেষণা দেখা গেছে যে, কমলার মধ্যে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। যা ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 

১৬. কমলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি উপকারী উপাদানঃ

রক্তচাপের অবনতির একমাত্র কারণ হল ভাত দোষের ভারসাম্যহীনতা। এক্ষেত্রে কমলাতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টি উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

 

 ১৭. কমলা ক্যান্সারের চিকিৎসায় উপকারী উপাদানঃ

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কমলাতে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য আছে। তাই এটি শরীর থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ কমাতেও সাহায্য করে।

 

১৮.কমলা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি উপাদানঃ

একটি গবেষণা দেখা গেছে যে, কমলালেবুর মধ্যে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। তাই এটি চোখের জ্বালাপোড়া, চুলকানি প্রভৃতি সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

 

১৯. কমলা বিষণ্নতার চিকিৎসায় উপকারী একটি উপাদানঃ

হতাশাও একটি রোগ যা বাতের দোষে ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে। কমলার মধ্যে আছে কার্মিনেটিভ বৈশিষ্ট্য। তাই এটি এই অবস্থায়তেও উপকার করে।

 ২০.পরিপাকতন্ত্রের ব্যাধি নিরাময়ে কমলার সাহায্য করেঃ

একটি ছোট শিশুকে প্রতিদিন (৫-১০ মিলি) কমলার রস খাওয়ালে পেট এবং অন্ত্রের রোগ নিরাময় হয়। এতে শিশুর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 

কমলার অপকারিতা 

যেমন কমলা নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে, তেমন এই মানুষগুলোর ক্ষতিও হতে পারে!

কমলা খেলে কি ক্ষতি হয়?

শীতকাল এলেই বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে এই কমলা রঙের ফল। মিষ্টি ও টক কমলা প্রায় সবাই পছন্দ করে। কমলার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং জল, তাই তারা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। কমলালেবু অবশ্যই উপকারী, কিন্তু যে কোনো কিছুই অত্যধিক খাওয়া যেমন ক্ষতির কারণ হতে পারে, তেমনই কমলাও অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে।

কারণ কমলার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, জল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চিনি, ফাইবার এবং ভিটামিন-সি , তাই এটি বেশি খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

  1. অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে বমি হতে পারে।
  2. অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা হতে পারে।
  3. অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে বদহজম, অম্বল, গ্যাস হতে পারে।
  4. অতিরিক্ত মাত্রায় কমলা খাওয়ার ফলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা হতে পারে।
  5. অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বেশি কমলা খেলে কি হয়?

যদি দিনে ৪ থেকে ৫টি কমলা খাওয়া হয়। তাহলে এটি শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি হবে। যার কারণে পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া ও বমি বমি ভাব হতে পারে। ভিটামিন-সি-এর অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অম্বল, বমি, নিদ্রাহীনতা এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

 

দিনে কত কমলা খাওয়া ঠিক?

কিছু গুরুতর কারণে, এটি বমি এবং অম্বল হতে পারে। যাদের উচ্চ পটাসিয়ামের মাত্রা আছে, তাদের কমলা খাওয়ার আগে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

কমলাতে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম আছে, তবে শরীরে যদি ইতিমধ্যেই খুব বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, তাহলে এটি হাইপারক্যালেমিয়া নামক একটি সম্ভাব্য গুরুতর অবস্থার কারণ হতে পারে।

কমলা অম্লীয় প্রকৃতির হয়, যা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) আক্রান্ত ব্যক্তিদের অম্বল কারণ হতে পারে। GERD-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের কমলালেবু খাওয়ার আগে তাদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

 

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম বেশি কমলা খেলে কি হয়? কমলার মধ্যে কি কি উপাদান আছে? এইসব  বিষয়ে জেনে নিলাম। আশা করি, আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। আর যদি ভালো লেগে থাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। আর ধন্যবাদ, জানাই সেইসব বন্ধুদেরকে যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।

 

Category:

Leave a Comment