আঙ্গুরের উপকারিতা ও অপকারিতা। এর বিশেষ পুষ্টিগুণ।2024

Table of Contents

আঙ্গুরের উপকারিতা ও অপকারিতা। এর বিশেষ পুষ্টিগুণ।2024

 

আঙ্গুর ফলকে কেউ কেউ ফলের রানীও বলেছেন। আঙ্গুরের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। ” আঙ্গুর ফল টক” এ গল্পটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে দেখতে গেলে আঙ্গুর ফল টক নয় বরং মিষ্টি। সব রকম ফলের মধ্যে আঙ্গুর ফল একটু অভিজত বলে গণ্য করা হয়েছে। তাই অন্যান্য ফলের চেয়ে আঙুরের দাম অনেক বেশি। খেতে খুবই সুস্বাদু আঙ্গুর। আঙ্গুর ফল থেকে তৈরি হয় ওয়াইন, জ্যাম, জেলি, রস ইত্যাদি। এছাড়াও তৈরি হয় কিসমিস, যা আমাদের প্রায় সকলের খুব প্রিয় একটি খাবার। আঙ্গুর ফল ৩ ধরণের হয়। যেমনঃলাল,সবুজ,কালো,সাদা।

এবার জেনে নেব আঙ্গুরের মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে।

 

 আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ :

ভিটামিন বি ১

ভিটামিন সি

ভিটামিন কে

পটাশিয়াম

ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।

 

আঙ্গুরের ইতিহাস জেনে নেব।

আঙ্গুরের ইতিহাস:

আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলে আঙ্গুরের চাষ শুরু করা হয়। চার হাজার বছর আগে জার্জিয়ায় ওয়াইন তৈরির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মানে হলো আঙ্গুর অনেক পুরনো ফল। আবার আঙ্গুরের তৈরি খাবারের ইতিহাস অনেক পুরনো।

তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায় প্রায় ১৩০০ শতাব্দীতে পারসিয়ানরা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আঙ্গুর চাষ শুরু করেন। পরবর্তীকালে ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলের বিস্তার লাভ করে। ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে উষ্ণ আবহাওয়ায় আঙ্গুর চাষ ভালো হয়।

আঙ্গুর বিভিন্ন প্রকারের মাটি ও আবহাওয়ায় জন্মাতে পারে‌। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাদা, সবুজ, লাল, কালচে বিভিন্ন রঙের আঙ্গুর চাষ করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে বীজ ছাড়া আঙ্গুর হয়ে থাকে।সারা বিশ্বে মোট উৎপাদনের ৭১% ওয়াইন বানাতে, ২৭% তাজা ফল হিসেবে এবং ২% শুকনো ফল বা কিসমিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও আবার আঙ্গুরের পাতাকেও খাওয়া হয়।

আঙ্গুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

 

এবার আমরা জেনে নেব আঙ্গুরের উপকারিতা সম্পর্কে।

আঙ্গুরের উপকারিতা:

আঙ্গুর ফল খেলে ত্বক সুরক্ষিত থাকেঃ

আঙ্গুর ফল খেলে আমাদের ত্বক সুরক্ষিত থাকে কেননা আঙ্গুরের মধ্যে আছে ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। যা আমাদের ত্বকে বিশেষ সুরক্ষা দিতে কাজ করে। এছাড়াও আঙ্গুর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।

 

আঙ্গুর ফল ক্যান্সার নিরাময়ের সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর মানবদেহে ক্যান্সার নিরাময়ের সাহায্য করে। আমরা আঙ্গুরের সাধারণত জুস করে খায়। আঙ্গুরের এই জুসে অ্যান্টিক অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফামিটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে। যা আমাদের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের প্রদাহ সাহায্য করে। সাধারণত ক্যান্সার রোগ জন্মের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে থাকে এই প্রদাহ।

 

আঙ্গুর ফল বয়সের ছাপে বাধা দেয়ঃ

আঙ্গুর ফল খেলে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে বাধা দেবে অর্থাৎ আঙ্গুর ফল খেলে আমাদের ত্বকের বলি রেখা পড়া থেকে দূরে থাকবে। আমাদের দেহের ফ্রি রেডিকেলস চামড়াতে বলিরেখা ফেলে দেয় কিন্তু আঙ্গুরের মধ্যে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা এই ফ্রী রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এবং আমাদের ত্বকে ঠিক রাখে। আর শরীরে বয়সের ছাপ পড়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।

 

আঙ্গুর ফল নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের সাহায্য করেঃ

যেসব ব্যক্তিরা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন, বিশেষ করে তাদের জন্য আঙ্গুরের রস খুবই উপকারী। আঙ্গুরের মধ্যে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। যা আমাদের শরীরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের সাহায্য করে। এবং ইনসুলিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 

আঙ্গুর ফল কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর ফল আমাদের কিডনি কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কেননা আঙ্গুর ফলের মধ্যে সব ভিটামিন উপাদান গুলো আছে, তারা ক্ষতিকারক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সহনশীল করতে সাহায্য করে। তার সাথে আমাদের কিডনির রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।

আঙ্গুর ফল স্তন ক্যান্সার নির্মূল করতে সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর ফল স্তন ক্যান্সার নির্মূল করতে সাহায্য করে। যেসব মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে। সেইসব মহিলারা নিয়মিত আঙ্গুর খেতে পারেন। কেননা বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে আঙ্গুরের উপাদান গুলো স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ এর বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম করে।

 

আঙ্গুর ভুলে যাওয়ার রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করেঃ

অনেকেই আছেন ছোট ছোট বিষয় খুব দ্রুত ভুলে যান। আবার দেখা যায় কোন কথা একদম স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এটি এক ধরনের রোগ। এই ভুলে যাওয়ার রোগটি নিরাময় করতে আঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে আঙ্গুর সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কেননা আঙ্গুরের মধ্যে আছে, সাধারণত টরোস্টেলবেন নামক এক ধরনের যৌগ। যা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

 

আঙ্গুর চুলের যত্নে সাহায্য করেঃ

এমন অনেকেই আছেন যাদের চুল একটু অযত্ন হলেই চুল খুশকিতে ভরে যায়। এছাড়াও দেখা যায় চুলের ডগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে যায়। ধূসর রংয়ের চুল হয়ে যায় এবং চুল ঝরতেও থাকে। এইসব সমস্যার সমাধানে আঙ্গুর খেতে পারেন।

 

আঙ্গুর শরীরে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে। আঙ্গুরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে তামা, লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের মত খনিজে পদার্থ। যেটা আমাদের শরীরে হাড় গঠন ও হাড় শক্ত করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

 

আঙ্গুর বদহজম দূর করতে সাহায্য করেঃ

আঙ্গুর আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়া হলে বদহজমের মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে।

 

মাথাব্যথা দূর করতে আঙ্গুর সাহায্য করেঃ

হঠাৎ যদি আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তাহলে আপনি ওষুধ না খেয়ে কয়েকটা আঙ্গুর খেলে আরাম বোধ করবেন। এছাড়াও আঙ্গুর ফল আমাদের মাইগ্রেনের ব্যথা রোধ করতেও সাহায্য করে।

 

অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে আঙ্গুর সাহায্য করেঃ

আঙ্গুরের মধ্যে অনেক ঔষধি গুনাগুন আছে। তার মধ্যে একটি ঔষধি গুন হল অ্যাজমার ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করে ও আমাদের শরীরে ফুসফুসের আদ্রতার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।

 

চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় আঙ্গুর সাহায্য করেঃ

আমাদের চোখ ভালো রাখতে আঙ্গুর সাহায্য করে। বয়স বাড়লে চোখের নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। এবং চোখের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী এই আঙ্গুর ফল।

 

এবার জেনে নেব আঙ্গুর খাওয়ার অপকারিতা গুলি ।

আঙ্গুরের অপকারিতা:

অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে অ্যালার্জি হতে পারেঃ

অনেকের আবার আঙ্গুর খেলে এলার্জি হয়। তাই তারা আঙ্গুর থেকে দূরে থাকবে।

 

অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে ওজন বাড়াতে পারেঃ

আঙ্গুরের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে। এক কাপ আঙ্গুরের রসে প্রায় ১০০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে। যেটি বেশি না। কিন্তু আঙ্গুর খুব ছোট ফল হবার কারণে আমরা একসঙ্গে অনেক আঙ্গুর খেয়ে ফেলি। তার ফলে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

 

অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে হজমের সমস্যা হতে পারেঃ

অতিরিক্ত কোন ফলই ভালো নয়। অতিরিক্ত ফল খেলে বদহজম হয়। তাই আঙ্গুর একটি ফল তাই অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে বদ হজম হতে পারে।

 

অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে গ্যাস হতে পারেঃ

এখন বেশিরভাগ মানুষই গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। আর গ্যাসের সমস্যার হওয়ার একটি কারণ আঙ্গুরও হতে পারে। কারণ আঙ্গুরের মধ্যে আছে ফরকরটোজ, এই উপাদানটি হজম হতে দেরি হয়। তাই অনেক সময় গ্যাসের কারনে পেট ব্যথা হয় এবং যাদের গ্যাস অম্বলে সমস্যা আছে তারা আঙ্গুর থেকে এড়িয়ে চলুন।

 

অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারেঃ

আঙ্গুরের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা আছে। এই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজ এর পরিণত হয় এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজের শরীরের জন্য ভালো নয়, এর ফলে রক্তের সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

আমরা জেনে নিলাম আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। সবশেষে বলি আঙ্গুর খাবেন, কিন্তু পরিমাণ মতো খাবেন। সব কিছুরই যেমন ভালো দিক আছে। ঠিক তেমনি খারাপ দিকও আছে। তাই কোন জিনিসই অতিরিক্ত মাত্রায় ভালো না। শরীর ভালো রাখতে সব কিছুরই প্রয়োজন। তাই সবকিছু পরিমাণ মতো খান।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে এবং আপনাদেরকে ভালো লেগেছে যদি কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।

 

Category:

Leave a Comment