কিভাবে শরীর সুস্থ রাখা যায় এই বিষয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, আজীবন সুস্বাস্থ্যের গোপণ চাবিকাঠি হল ‘লাইফস্টাইল মেডিসিন’। যা খুবই সহজ। কেবলমাত্র আপনার ডায়েটে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সেই সঙ্গে কীভাবে নিজেকে স্ট্রেস ফ্রি রাখতে পারবেন সেটা শিখুন।
আপনার সুস্বাস্থ্য (Healthy lifestyle) কীভাবে বজায় রাখবেন তার সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি। সেটা আদর্শগতভাবে আত্ম-আবিষ্কার এবং শেখার যাত্রা হওয়া উচিত।
নিয়মিত শরীরচর্চা বার্ধক্য ঠেকাতে পারে। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক করে, চর্বিহীন পেশী উন্নত করে, কোলেস্টেরল কমা এং হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে।
আপনার বাড়ির চারপাশে জগিং করুন, বাড়ির বা প্রতিবেশীর বাচ্চাদের সঙ্গে পার্কে হাঁটুন, লাফ দড়ির অভ্যাস করুন বা খেলাধুলো করুন, হাইকিং পছন্দ হলে সেটাও করতে পারেন।
আপনি যদিও আপনার মুডও ট্র্যাক করেন তাহলে লক্ষ্য করতে পারবেন যে আপনি আপনার ব্যায়াম করার দিনগুলোতে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং আনন্দিত থাকেন।
ব্যায়াম আপনার শরীরে এন্ডোরফিন (endorphins) রিলিজ করে, যা সামগ্রিকভাবে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বাড়ায়। এইভাবে নিয়মিত ব্যায়াম শুধু আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে সাহায্য করে না, বরং আপনার বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিও কমায়।
সারাদিনে অন্তত পাঁচটি সবজি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। কিভাবে শরীর সুস্থ রাখা যায় তা বিবেচনা করে আপনার পছন্দমতো, কাঁচা, সেদ্ধ বা ভাজা করে খেতে পারেন। ডায়েটে শাকসবজির পরিমাণ বেশি হলে তা ফুসফুস, কোলন, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সঠিক খাবার আপনার ওজন ঠিক রাখবে, লক্ষ্যে স্থির রাখবে এবং লালসা এড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন ঠান্ডা পানীয়, ক্যান্ডি, চিপসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় না, বরং শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি পৌঁছে দেয়। চা এবং কপির আকারে আপনি কতটা ক্যাফাইন গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন দু’কাপের বেশি খেলে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যার ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত জল খাওয়া খুবই প্রয়োজন। জল ডিটক্সিফাই করে, হজমে সাহায্য করে, কেমোথেরাপির ফলাফলে সাহায্য করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশীকে শক্তি জোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনি কাজ করার সময় ডেস্কের পাশে এবং ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানার পাশে জলের বোতল অবশ্যই রাখুন। এটি আপনাকে আরও জল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে।
আপনি আপনার ডায়েটে ডাবের জল এবং তাজা ফলের রসও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
মেডিটেশন বা ধ্যানের সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা রয়েছে। এটি মানসিক চাপ কমায়, আমাদের আরও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে দেয়, লক্ষ্যে স্থির রাখে এবং ব্যথা দূর করে।
পর্যাপ্ত অনুশীলন, মননশীলতা, মস্তিষ্ককে স্থির রাখা এবং নিজের প্রতি সদয় হওয়া জীবনের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।
আপনি পুরোপুরি সুস্থ বোধ করলেও আপনার শরীর সুস্থ আছে তো? নিজের জন্য সময় বের করে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখুন। এটি যে কোনও রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি ডাক্তারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে, আপনার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কম করে, আপনার শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং এটি এমন একটা জিনিস যা আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার ক্যান্সার সহ অন্য কোনও রোগের ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করুন। ধূমপান, নিয়মিত অ্যালকোহল পান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা করান, যে কোনও তাহলে রোগ প্রথম দিকেই সনাক্তকরণ সহজ হবে এবং তাতে আপনার দ্রুত আরোগ্য লাভের সুযোগ থাকবে।
বিশ্রাম এবং মেডিটেশন, ঘুমানোর আগে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ আপনাকে রাতে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগেই খাবার খাবেন না, শোবার ঘর অন্ধকার রাখুন এবং সমস্ত স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যান। অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।
অ্যালকোহল শরীরে টক্সিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়, হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের গতি অনিয়মিত করে তোলে, মস্তিষ্ক নিজেকে ত্বরান্বিত করে এবং লিভার এটিকে বিপাক করার চেষ্টা করে ওভারড্রাইভ করে।
এগুলি ছাড়াও আরও খারাপ দিক রয়েছে যা মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের ওজন, ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল শরীরে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপান বন্ধ করা কঠিন ঠিকই, কিন্তু আপনি একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আপনি কী নিজের থেকে এটিকে বেশি ভালোবাসেন? নিশ্চয় নয়! ধূমপান হল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ যা চাইলে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের 50% ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আপনার যদি এই অ্যাস ছাড়তে সমস্যা হয় তাহলে কাউন্সিলিংয়ের সাহায্য নিতে পারেন। কেন আপনার ধূমপান ছেড়ে দেওয়া উচিত সে বিষয়ে আপনি আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
আজকাল আমরা সকলেই খুব ব্যস্ত। তাই চেষ্টা করুন সহজ সিম্পল খাবার রান্না করে খেতে। তাতে সময়ও বাঁচবে আবার শরীরের জন্য উপকারীও হবে। প্রয়োজনে ছুটির দিনে একবার বসে সপ্তাহের খাবার মেনু ঠিক করে নিন, তাতে আপনার সুবিধে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা আপনাকে অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি এবং নুনযুক্ত খাবার এড়াতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর রাখে।
আমরা অনেকেই জানি, যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্র্যান্স ফ্যাট উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আপনি খাদ্য তালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন। যা কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসু্স্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে। দুধ, ডিম এবং পনির থেকেও ওমেগা-3 পেতে পারেন।
আপনার মুখের স্বাস্থ্যও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মুখকে অবহেলা করলে দাঁতের সমস্যা এবং মাড়ির রোগ যেমন প্রদাহ এবং প্লাক তৈরি হতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, যে দাঁতের সুস্বাস্থ্য হৃদরোগ, নিউমোনিয়া, অস্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা, অ্যালজাইমার এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের ঝুঁকি কমায়।
আপনার মুখের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক চিহ্ন, আলসার বা ক্ষত রয়েছে কিনা দেখুন। সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট বা সাধারণ চিকিৎসকের সঙ্গে তাড়াতাড়ি পরামর্শ করুন। যারা ধূমপান করেন, তারা নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করান। তামাক শুধুমাত্র আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, আপনার দাঁত ও মাড়ির জন্যও খুব ক্ষতিকারক।
আপনি যদি ডেস্কে কাজ করেন, তাহলে আপনার জীবনধারায় পরিবর্তন করার সময় এসেছে। কারণ পেশীগুলিকে নড়াচড়া করতে এবং নমনীয় করতে একটানা কাজ না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নিন এবং চলাফেরা করুন। অফিসের কাজের পর প্রয়োজনে জিম জয়েন করুন, বাচ্চাদের বা প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যান। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন, সহকর্মীদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করুন।
সুস্থ থাকতে কৃতজ্ঞতা বোধ গড়ে তোলা হল অন্যতম উপেক্ষিত হাতিয়ার। এটি শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, সহানুভূতি বাড়ায়, আগ্রাসন হ্রাস করে, মানসিক শক্তি এবং আত্মসম্মান বোধ উন্নত করে। যা নতুন সম্পর্কে দরজাও খুলে দেয়। সেইসঙ্গে নিজের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বজায় রাখতে এগুলো মনের মধ্যে গেঁথে নিন:
সুতরাং, কিভাবে শরীর সুস্থ রাখা যায় সেদিক আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সঠিক পথে এগিয়ে যান এবং সহজ সরল অভ্যাস গড়ে তুলুন। বড় পরিবর্তনের বদলে এমন লক্ষ্য তৈরি করুন যা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত এবং লক্ষ্যে স্থির থাকুন।